মোঃ মাহমুদুল হাবিব রিপন
গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি
গাইবান্ধার পলাশবাড়ির প্রায় সব ইউনিয়নে গো-খাদ্যের চাহিদা পূরণ ও বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে উন্নত জাতের ঘাস।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র হতে জানা যায় পলাশবাড়ি উপজেলায় মোট খামারি রয়েছে ৯৮৮ জন। তাদের খামারের গো-খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য চাষ করছে উন্নত জাতের ঘাস এবং পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবেও তারা ঘাস চাষে আগ্রহী হয়ে পড়ছেন। পলাশবাড়ী উপজেলায় প্রায় ৩২ একর জমিতে ঘাস চাষ করছেন খামারি ও কৃষকেরা । গবাদিপশুর ঘাসের চাহিদা পূরণসহ ঘাস বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে অনেকে। এ ঘাস দ্রুত বাড়ে, সহজে জন্মে, পুষ্টিকর, সহজপাচ্য ও খরাসহিষ্ণু ৪ থেকে ৮ ফুট লম্বা হয়। একবার রোপণ করলে ৪ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায় ।
আবার অনেকেই এই ঘাস বিক্রি করে হচ্ছেন আত্মনির্ভরশীল।
গাইবান্ধা পলাশবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে,পতিত জমি এবং বাড়ির আশপাশে ও রাস্তা ঢালু জায়গাতেও ঘাস চাষ হচ্ছে ব্যাপক হারে।
অপরদিকে অনেক খামারিদের দাবি গো-খাদ্য হিসেবে আগে ধানের খড় ব্যাবহার করা হত, বর্তমানে ধানের খড়ের দাম অনেক বেশি। এতে করে দুধ বা মাংস উৎপাদনে খরচ বেশি হয়। এখন তারা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের পরামর্শ ও সহযোগীতায় উন্নত জাতের ঘাসের চাষাবাদ করছে। এতে করে গবাদি পশুর খাদ্যের চাহিদা মিটিয়েও ঘাস বাজার জাত করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী।
পলাশবাড়ি উপজেলার ১নং কিশোর গাড়ি ইউনিয়নের
সুলতান পুর (বাড়াই পাড়া)গ্রামের মোঃ আব্দুল গফুর এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, নিজের গবাদিপশুকে খাওয়ানোর জন্য ০৫ শতক জমিতে ঘাস চাষ শুরু করি। নিজের গবাদিপশুকে খাওয়ানোর পরে অতিরিক্ত ঘাস বিক্রয় করা শুরু করি এতে আমার ঘাস চাষের খরচ উঠে আসে। বিষয়টি আমার কাছে লাভ জনক মনে হওয়ায় বতমানে আমি২২বিঘা জমিতে ঘাস চাষ করছি। ঘাসের প্রতিআঁটি ১০ টাকা করে বিক্রি করা যায় এভাবে মাসে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আমার ইনকাম হয়।এই ঘাস বিক্রয় করে আমি এখন অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছি। বর্তমানে উন্নত জাতের ঘাস চাষ করে বিক্রয় করাকে পেশা হিসাবে নিয়েছি।
একই গ্রামের ঘাস চাষী আয়নাল হকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় ,তিনি অন্যদের ঘাস লাগানো দেখে তারপর তিনি নিজেই ঘাস লাগানোর জন্য উদ্বুদ্ধ হয়। তিনি আরো বলে, অন্যান্য আবাদের থেকে এই ঘাস চাষে খরচ অনেক কম, লাভ বেশি এবং ঘাসের চাহিদাও প্রচুর। এখন আমি ১৩২ শতাংশ জমিতে ঘাস চাষ করছি । বর্তমানে তিনি ঘাস বিক্রি করে স্বাবলম্বী। তিনি বলেন সরকারি ভাবে কোন সাহায্য সহযোগিতা পেলে আমি ঘাস চাষ করে আরো ভালো কিছু করতে পারব এবং নিজেকে আরো স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো।
ঘাস চাষি রায়হান সরকারের কাছ থেকে জানা যায় ,
এই ঘাস লাগাইতে খরচ খুবই কম। এই ঘাস মিষ্টি বেশি হওয়ায় গাভির দুধও বেশি হয়। এই ঘাস চাষের জন্য বীজ বোনা এবং চারা লাগানো যায়। বীজ বুনলে দেড় মাস এবং চারা লাগালে এক মাসের মধ্যে ঘাস বড় হয়ে যায়। প্রতিমাসে অল্প ফসফেট, পটাশ এবং ইউরিয়া সার দিতে হয়। মাঝে মধ্যে একটু সেচও দিতে হয়। তিনি আরো বলেন, এই ঘাস চাষ করে গরু-ছাগলকে খাওয়ানোর পাশাপাশি জমি থেকে ঘাস বিক্রিও করছি। ঘাসের টাকায় সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ, জমির সার-কীটনাশক কেনার জন্য আগের মতো কষ্ট করতে হয় না।গ্রামের অনেকেই ঘাস চাষ করে লাভবান হয়েছেন।
লাইভ স্টার সার্ভিসে প্রোভাইডার ইউনিয়ন কর্মকর্তা
মোঃ এনামুল কবিরের কাছ থেকে জানা যায় তিনি ইউনিয়নে প্রত্যেক বাড়ি বাড়ি গিয়ে খামারের তালিকা করেছিল। খামারির তালিকা করতে গিয়ে দেখতে পায় যে
অনেকেরেই গরু আছে ঘাস নেই, কিন্তু ঘাস ছাড়া গরু পালন করা অনেক কষ্টকর। এর জন্য ঘাস চাষে উদ্যোক্তা বৃদ্ধির জন্য সকলকে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি।
পলাশবাড়ি উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডঃ হারুন অর রশিদ বলেন ,আমাদের অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে ঘাস চাষ ও একটি প্রকল্প। যেহেতু বেশিরভাগ বাড়িতেই গবাদি পশু পালন করা হয়। এইসব গবাদি পশুর খাদ্য চাইতে পূরণ করতে ঘাস উৎপাদন বেশি করতে হবে । এবং বর্ষা মৌসুমেও ঘাস চাষীরা যাতে সহজেই ঘাস সংরক্ষণ করতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষক ও খামারিদের ঘাস চাষে প্রশিক্ষণসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে ।
Leave a Reply